উচ্চ রক্তচাপ—নিঃশব্দে শরীরে বাসা বাঁধা এক ভয়ঙ্কর শত্রু। বেশিরভাগ সময়ই কোনো লক্ষণ না থাকলেও ভেতরে ভেতরে এটি শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে শুরু করে। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যেমন জরুরি, তেমনই জরুরি সেটি সঠিকভাবে মাপা। ভুলভাবে প্রেশার মাপলে চিকিৎসা, পরামর্শ—সবই ভুল পথে চলে যেতে পারে।
আগের দিনে ব্লাড প্রেশার মাপতে চিকিৎসকের কাছেই যেতে হত। এখন অবশ্য বাড়ির ডিজিটাল BP মেশিনেই সহজে রিডিং পাওয়া যায়। তবে যন্ত্র ঠিক থাকলেই হবে না—মাপার নিয়ম সঠিক হতে হবে। সামান্য ভুলেই রিডিং অনেকটা ওঠানামা করতে পারে।
কোন যন্ত্রে মাপবেন ব্লাড প্রেশার?
আজকাল তিনভাবে প্রেশার মাপা যায়—
ডিজিটাল মেশিনে প্রেশার মাপা সবচেয়ে সহজ, তাই বাড়িতে এটি ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। কিন্তু মাসে অন্তত দু’বার অ্যানালগ/মার্কারি মেশিনে রিডিং মিলিয়ে দেখা জরুরি।
যদি অ্যানালগের তুলনায় ডিজিটাল রিডিং খুব বেশি আলাদা হয়, তাহলে বুঝবেন—মেশিন বদলানোর সময় এসেছে।
প্রেশার মাপার সঠিক নিয়ম — ধাপে ধাপে
১) প্রেশার মাপার সময় সঠিকভাবে বসা জরুরি
• পিঠ যেন চেয়ারের সঙ্গে লেগে থাকে।
• হাত দু’টি টেবিলের ওপর বিশ্রামে রাখুন।
• হাত হার্টের সমতলে থাকতে হবে।
• কাফটি কনুই থেকে প্রায় ২.৫ সেমি উপরে বাঁধুন।
• কাফ খুব ঢিলা বা টাইট হবে না।
রোগী মোটা হলে বড় কাফ এবং রোগা হলে ছোট কাফ দরকার—এটি ভুল হলে রিডিং ভুল হবে।
২) ব্রাকিয়াল ধমনি শনাক্ত করা
অ্যানালগ BP মাপলে কনুইয়ের উপরের অংশে ব্রাকিয়াল আর্টারির অবস্থান বুঝে স্টেথোস্কোপের ডায়াফ্রাম রাখতে হয়—এটিই সঠিক শব্দ শোনা নিশ্চিত করে।
৩) মিটার বা স্কেল হার্টের সমতলে রাখা
যন্ত্র হার্টের তুলনায় বেশি ওপরে বা নিচে থাকলে রিডিং ভুল হবে।
কখন প্রেশার মাপা ঠিক নয়?
অনেকেই ভুল সময়ে প্রেশার মেপে ভুল রিডিং পান। তাই মনে রাখুন—
– বাড়ি বা বাইরে দৌড়ঝাঁপ করে এসে অন্তত ২০–৩০ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে মাপুন
– পেটের বেগ (প্রসাব/পায়খানা) চাপা অবস্থায় BP মাপা যাবে না।
– BP মাপার সময় মুখে কথা বলবেন না, নড়াচড়াও করবেন না।
– দুই পা সমানভাবে মাটিতে রাখুন—পা ক্রস করলে রিডিং বদলে যাবে।
– খাওয়ার ঠিক পরপরও নয়, আবার একদম খালি পেটেও নয়।
– মাপার আগে ধূমপান, কফি, অ্যালকোহল নেবেন না—এগুলো রিডিং বাড়িয়ে দেয়।
